নিরাপদ থাকতে করণীয়, আধুনিক বিশ্ব ইন্টারনেট ছাড়া অচল বলা যায়। কোনো না কোনো ভাবে আমরা প্রত্যেকেই ইন্টারনেটের সুফল ভোগ করছি। আপনি যেহেতু এই পোস্টটি পড়ছেন, তাই আপনিও ইন্টারনেটের আওতায় রয়েছেন। আমরা প্রতিদিন কত সাইট ভিজিট করি, কতই না কনটেন্ট দেখি। আর এই সুযোগে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন উপায়ে ইন্টারনেট ইউজারদের চোখে ধূলা দিয়ে বিভিন্ন শ্রেনীভেদ ক্ষতি করছে। কেউ কেউ জরুরি ফাইল মুছে ফেলছে, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি করছে, ভুয়া ইনফরমেশন দিয়ে টাকাপয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে, পিন কোড জেনে নিয়ে প্রতারণা করছে, এইরকম কত কী! এসব সমস্যা হতে নিরাপদ থাকার জন্য কিছু টিপস নিয়ে আজকের পোস্ট। ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকতে করণীয় চলুন শুরু করি।

ডাউনলোডের ক্ষেত্রে সাবধান হোন

ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকতে করণীয় হিসাবে ইন্টারনেটে নানারকম সাইট ব্রাউজ করার টাইম চটকদার এডে পর্যাপ্ত কিছুই ডাউনলোডের অফার দেখবেন। এগুলোতে ক্লিক করার আগে দু’বার ভাবুন। অবগত ও নির্ভরযোগ্য সাইট ব্যতীত অন্য কোনো সাইট হতে ডাউনলোডের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। নানারকম ওয়েবসাইটে ক্র্যাক, কিজেন প্রভৃতির কথা বলে ম্যালওয়্যার/ভাইরাস ধরিয়ে দেয়া হয়। সর্বাপেক্ষা ভাল হয় আপনি যদি বিশ্বাসী সাইট ব্যতীত অন্য কোথাও হতে ডাউনলোড না করেন। আর ডাউনলোডকৃত ফাইল স্ক্যান করার জন্য কোনো এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার (যেমন উইন্ডোজ ডিফেন্ডার) ব্যবহার করার জন্য পারেন। এই লিংকে সেরা ৫ ফ্রি এন্টিভাইরাস সম্মন্ধে জানতে পারেন।

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন

পাসওয়ার্ড মনে রাখার ভয়ে অনেকেই একের অধিক সাইটের জন্য একই পাসওয়ার্ড প্রয়োগ করেন। তা সত্ত্বেও এটি মোটেই নির্ভুল না। কারণ, এতে আপনার ঐ পাসওয়ার্ডটি বেহাত হয়ে গেলে আপনার সকল অনলাইন একাউন্ট ঝুঁকিতে পড়বে। নিজে পাসওয়ার্ড মনে রাখার প্যাঁচ এড়াতে একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন। নানারকম ব্রাউজার, উদাহরণসরূপ গুগল ক্রোম, ফায়ারফক্স, মাইক্রোসফট এজ প্রভৃতিতে বিল্ট-ইন পাসওয়ার্ড ম্যানেজার থাকে। এগুলো ইন্টারনেটে সিঙ্ক্রোনাইজ করে একের অধিক ডিভাইসে এক্সেস করা যায়। সুতরাং আপনি চাইলে এসব সেবা ব্যবহার করতে পারেন। তার সাথে অবশ্যই শক্ত পাসওয়ার্ড প্রয়োগ করুন ও স্বার্থে নিরাপদ স্থানে লিখে রাখুন।

ব্রাউজারের এড্রেসবার স্মরণ করুন

এমন প্রচুর আক্রমণকারী আছে, যারা জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের মত দেখতে নকল সাইট সৃষ্টি করে ওই জায়গা লোকজনকে নিয়ে লগইন করতে বলে। ভিজিটররা সেই সময় তাতে ইউজারনেম পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করার অসমর্থ উদ্যোগ করেন। এই প্রবলেম থেকে সরে থাকতে ইন্টারনেটে তথ্য দেয়ার প্রথমে ব্রাউজারের এড্রেসবার স্মরণ করুন যে আপনি কোন সাইটে আছেন। এক্ষেত্রেও একটি পিন কোড ম্যানেজার অ্যাপ্লিকেশন দুর্দান্ত কাজে আসবে।

কারণ, ১টি সাইটের জন্য আপনার সেইভ করা পিন কোড অন্য সাইটে নিজ থেকে সাজেস্ট করেনা। সুতরাং যখন আপনার পাসওয়ার্ড সেভ করা ওয়েবসাইটের লগইন পেজে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পিন কোড না দেখাবে, তখন এড্রেস বার দেখে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি প্রকৃতপক্ষে কোন সাইটে আছেন। এড্রেসের শুরুতে সবুজ রঙে HTTPS থাকাটা খুবই জরুরি। কারণ শুরুতে HTTP (S থাকেনা) লেখা সাইটগুলো ব্রাউজ করার সময় ইন্টারনেট কানেকশন হ্যাক করে তৃতীয়পক্ষ আপনার গুপ্ত ইনফরমেশন (পাসওয়ার্ড, ডেবিট কার্ড ইনফরমেশন প্রভৃতি) জেনে ফেলতে পারে।

অনলাইন একাউন্টে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করুন

টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন পদ্ধতিতে নানারকম ওয়েবসাইট সেগুলোর ব্যবহারকারীদের ইউজারনেম-পাসওয়ার্ড ছাড়া দ্বিতীয় একটি উপায়ে পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। এটি প্রয়োগ করলে প্রতিবার নতুন ডিভাইস/ব্রাউজারে আপনার কাঙ্ক্ষিত সেবায় (উদাহরণস্বরূপ জিমেইলে) সাইন ইন করার সময় ইউজারনেম-পাসওয়ার্ড ইনপুট করার পরেও ওখান আরেকটি পিন কোড দেওয়ার জন্য হবে। এই কোডটি মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে আসে।

এগুলোকে সিক্যুরিটি কোডও জানানো হয়, যা প্রতিবারই সার্ভার হতে পাঠানো হয়। ইউজারনেম-পাসওয়ার্ড নিয়ে নিলেও সেইম সময়ে আপনার মোবাইল ফোন ফোনটি হ্যাকারের হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। এভাবেই আপনার একাউন্টটিও হ্যাকিংয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। বিভিন্ন একাউন্টে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন আরম্ভ করার জন্য চাইলে নিচের তালিকা হতে টিউটোরিয়ালগুলো দেখুনঃ

  • জিমেইল
  • ফেসবুক
  • মাইক্রোসফট আউটলুক, হটমেইল প্রভৃতি
  • হোয়াটসঅ্যাপ

নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট ব্রাউজার প্রয়োগ করুন

বর্তমানে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট ব্রাউজার বলতে গুগল ক্রোম, মাইক্রোসফট এজ, মজিলা ফায়ারফক্সকে সর্বাপেক্ষা বহু বিবেচনা করা যায়। অপেরা ব্রাউজারও ভাল। তবে ইউসি ব্রাউজারের বিশ্বস্ততা নিয়ে অবিশ্বাস রয়েছে। ইউসি ব্রাউজারের বিপক্ষে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ এসেছে। এমনকি গুগল প্লে স্টোর থেকে ইউসি ব্রাউজার একবার মুছেও দেয়া হয়েছিল। ইউসি ব্রাউজারে বিভিন্ন প্রকারভেদ অ্যাডভারটাইজমেন্ট ও ক্লিকবেইট নিউজ/ভিডিও কনটেন্ট দেখানো হয় যা অধিকাংশই পছন্দ করেন না। এইজন্য বুঝেশুনে ব্রাউজার প্রয়োগ করুন।

ওয়াইফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান থাকুন

আজকাল নানারকম স্থানে ফ্রি ওয়াইফাই পাওয়া যায়। এসব ওয়াইফাই হটস্পট ব্যবহারের টাইম সাবধানতা নির্ভর করুন। ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় নিরাপদ থাকার উপায় এইখানে দেখুন।

আশা করি এই টিপসগুলো আপনার উপকারে আসবে। বাংলাটেক টোয়েন্টিফোর ডটকম হতে প্রযুক্তি বিষয়ক নানারকম ইনফরমেশন সরাসরি আপনার ইমেইল ইনবক্সে পেতে এইখানে সাবস্ক্রাইব করে নিন। ধন্যবাদ।

গুগলে দ্রুত সঠিক তথ্য খুঁজে পাওয়ার কৌশল